Slide show

Powered by Blogger.

নিজের সন্তানদেরও একা ছাড়ব না

  নিজের সন্তানদেরও মাহরামদের সামনে একা ছাড়ব না





যে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের সন্তানদেরও মাহরামদের সামনে একা ছাড়ব না, আমিও থাকিনা ❤️‍🩹

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

তখন রাত আড়াইটার মত বাজে। পেইজে একটা মেসেজ এসেছে। চেক করে আঁতকে উঠলাম। যে বোন মেসেজ করছেন, আজকে রাতে তার সাথে ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আপুর আপন ছোট চাচ্চু আপুর ঘরে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ আপুর জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে! এক হাত দিয়ে টাচ করেছে এবং অন্য হাত দিয়ে শক্ত ভাবে আপুকে ধরেছে যেন সে নড়তে না পারে।

"চাচ্চু এসব কি! ছাড়েন! প্লিজ আমাকে ছাড়েন!"

"তুমি না লক্ষী মেয়ে! আমি তোমাকে আদর করছি তো! আমার ভাইয়ের এত লক্ষী একটা মেয়ে, তাই আদর করছি। আরে এটা কোন সমস্যাই না!"

মেয়েটা একেবারে বোবা হয়ে গেছে!

দ্বীনের ব্যাপারে সচেতন এই বোন। কলেজ পাশ করেছে এমন বয়স। সম্পূর্ণ নিকাব করেন। কোন ছেলে যেখানে তার চেহারাও আজও দেখেনি, সেখানে তার বাবার এই আপন ছোট ভাই তার সাথে এরকম একটা আচরণ করল!! আপু আমাকে মেসেজে বলছে, নিজের উপর খুব ঘেন্না হচ্ছে! নিজের দিকে তাকাতে পারছি না! আমি তো আমার স্বামীর জন্য নিজেকে সংরক্ষণ করে রেখেছি, যেন আল্লাহ আমার উপর খুশি থাকেন! আমি একজন পর্দানশীল নারী, আমি এখন কি করবো? কিছুই বুঝতে পারছিনা!

আমি নিজেও এই ধাক্কায় একদম হকচকিয়ে গেলাম।

হয়তো আল্লাহ চেয়েছেন আমার উসিলায় আল্লাহ-ই মেয়েটাকে মেন্টাল সাপোর্ট দিবেন। সেজন্য প্রথমে কয়েকটা জিনিস নিশ্চিত করলাম: —

📍 ১/ সর্বপ্রথম, নিশ্চিত করতে চাচ্ছি মেয়েটার নিরাপত্তা! সে যেন এই নোংরা লোকের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। কিছুতেই তার ঘরে, তার আশেপাশে এই লোককে যেন আসতেই না দেয়।

🔸উল্লেখ্য খুব সম্ভবত তার এই ছোট চাচা বড় একটা সময় ধরে প্রবাসে ছিল। প্রায় ২০ বছর পরে সে বাংলাদেশে এসেছে এবং নিজের ভাইয়ের বাসায় উঠেছে। তার ভাইয়ের এই মেয়েটাকে সে কখনোই ছোটবেলা থেকে বাচ্চা অবস্থায় দেখেনি। একেবারে তরতাজা যুবতী হিসেবে এই প্রথম দেখছে।

এমন অবস্থায় আমি বললাম, তুমি যেভাবে একজন নন-মাহরাম লোকের সাথে পর্দা করতে, এই নোংরা লোকের কাছ থেকে সেভাবেই হয়তো সচেতন থাকতে হবে।

📍 ২/ কিন্তু একা একা বেশিদূর যাওয়া যাবেনা।

বিষয়টা অবশ্যই অবশ্যই জানাতে হবে অভিভাবকদেরকে।

মেয়েটাকে সাহস দিলাম, যত দ্রুত সম্ভব ইমিডিয়েটলি যেন মা বাবাকে এগুলো জানায়। তখনই জানতে পারলাম, এই ছোট চাচা তার বাবাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করেছে। তার ছোট চাচার কাছে তারা বিভিন্ন উপকারের জন্য ঋণী।

একটু ইনফরমেশন দেই: কিছু কিছু এবিউসারের জন্য এই প্রক্রিয়াটাকে "গ্রুমিং" বলে। অর্থাৎ যাকে সে এবিউজ করার জন্য টার্গেট করেছে, তার পরিবারের সাথে আগে থেকেই এত ভালো সম্পর্ক করার চেষ্টা করে যেন, ঘটনা ঘটানোর পরে তার দিকে সন্দেহ কম আসে। আমার কাছে মনে হল এই লোক ক্লাসিক গ্রুমিং করে রেখেছে!

আমি বললাম যতই উপকার করুক না কেন, সেটা এই ভয়ঙ্কর বীভৎস ক্রাইম যেটা সে করেছে, সেটাকে মুছে দিবে না। তুমি বলো আপু।

আমার সবচেয়ে ভয় লাগছিল যে, মা-বাবা মেয়েটাকে অবিশ্বাস করে মেয়েটাকেই আবার দোষ দেয় কিনা!! এসব ক্ষেত্রে মা-বাবা এই কাজটা করলে, একটা মেয়ের জন্য সেটা কতটা মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে, তা বলে বোঝানো সম্ভব না! কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবা শুরু করে। আমাদের এই বোনটাও আত্মহত্যার কথা ভাবছিল একপর্যায়ে! তখন আবার তাকে ভালোবাসা, মায়া এবং আল্লাহর রিমাইন্ডার দিয়ে বাস্তবতায় ফেরত নিয়ে আসলাম।

🔸 ঘটনা ঘটে যাওয়ার আরো কয়েকদিন পর্যন্ত সে মা-বাবাকে একটা শব্দ-ও বলতে পারেনি‌। আমাকে শুধু মেসেজে বলে, আপু আমি এই শব্দগুলো কীভাবে উচ্চারণ করব আমার মুখে? বাবাকে তো জীবনেও বলতে পারব না! মাকে বলতেও আমার মুখ বাঁধে! কয়েকবার বলতে গিয়ে সে ফেরত এসেছে।

আমি বললাম, আপু দরকার হলে চিঠি লেখো। চিঠি লিখে মাকে বলো! মা নিজেই পরে বাবাকে জানাবে। কারণ এই লোক যতদিন বাসায় ভেতরে আছে, তুমি নিরাপদ না! অভিভাবককে জানিয়ে এই লোকের ব্যবস্থা তো করতে হবে।

📍 ৩/ তখন এই চাচা সম্পর্কে জানা গেল, তার বয়স ৫০ ঊর্ধ্ব অথচ এখনো বিয়ে করেনি(!) আমি আরো মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি এর আগে এই লোকের কাছ থেকে কোন অস্বাভাবিক আচরণ দেখেছো? কোন ধরনের আলামত যে, সে এমন একটা কাণ্ড ঘটবে?

তখন মেয়েটা আমাকে যা বলল, শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম! শুরু থেকেই চাচা নামের এই লোক মেয়েটাকে নানা অজুহাতে টাচ করার চেষ্টা করত। কথায় কথায় গাল টিপে দিত, নাক টিপে দিত, হ্যান্ডশেক করত। মেয়েটার অস্বস্তি লাগলেও ভেবেছিল, হাজার হোক এটা তো আমার মাহরাম চাচা!

এরপর একদিন বাসার সবাই একটু দূরে ছিল। লিভিং রুমের সোফায় শুধু চাচা এবং ওই মেয়েটা ছিল। চাচা বলা শুরু করল, "আসো আমার পাশে একটু বসো।" মেয়েটার আনকম্ফোর্টেবল লাগায় এসে বসতে চাচ্ছিল না। "না চাচ্চু আমি এখানেই ঠিক আছি!"

চাচা জোর করে তাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল, "আসো আমরা মজার ভিডিও দেখি!" ভিডিওর কয়েক সেকেন্ড দেখেই মেয়েটার বমি চলে আসলো এবং সে দৌড় দিয়ে ওঠে সেখান থেকে চলে গেল! বুঝা গেল মেয়েটাকে জোর করে পর্ন দেখানোর চেষ্টা করছিল!

আল্লাহু আকবার!

এই আচরণগুলো মূল ঘটনার আগেই ঘটছিল। এই জিনিসগুলো ওয়ার্নিং সাইন হিসেবে নেওয়াটা খুব জরুরি ছিল।

হয়তো লজ্জায়, ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটা বুঝতে পারিনি যে, চাচুর মাথায় কি চলছে? আমার কি করা উচিত? কীভাবে এত লজ্জার কথা বলবো? কাকে বলবো? মা বাবাকে ? বললে বিশ্বাস করবে তো নাকি আমাকেই বকা দেবে?

🔸 লং স্টোরি যদি শর্ট করি —

আল্লাহর অশেষ রহমতে ফাইনালি মেয়েটা সাহস করে তার মা-বাবাকে তার চাচার কুকীর্তির কথা জানায়। পুরো প্রক্রিয়ায় আমি তাকে ক্রমাগত সাহস দিয়ে বলেছি, "আপু প্লিজ আমাদের ঈমানের জায়গা থেকে হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। তুমি ভয় পেয়ো না। আল্লাহ তোমার সাথে আছেন। তুমি এই লোকটাকে এক্সপোজ করো। আমি তোমার জন্য অনেক দোয়া করছি। আল্লাহ তোমাকে সাহস দিবেন, তোমার জন্য ফেরেশতা পাঠিয়ে দিবেন যেন তুমি সত্য কথা শক্তভাবে বলতে পারো!"

মেয়েটার বাবা তার আপন ছোট ভাইয়ের কান্ডের কথা বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না! মা কান্না করছিল! মেয়েটাও কান্না করছিল। তার বাবা এমনিতেও অসুস্থ, বারবার সে ভাবছে, আমার এই ঘটনার চাপ নিতে না পেরে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে যাবে না তো?

তারপরও ঘটনাটা বলা অনেক জরুরী ছিল!

কারণ ঐ দিন টাচ করার পরেও চাচা মেয়েটাকে আরও একদিন দরজার পিছনে ওঁত পেতে থেকে, জড়িয়ে ধরে কুকর্ম করার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটা কোনমতে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে চলে এসেছিল।

আমি মেয়েটাকে বলেছিলাম যে, তুমি প্রয়োজনে তোমার সাথে অস্ত্রের মত ব্যবহার করা যাবে, এমন টুকটাক কিছু জিনিস রাখো। পাথরের মত পেপার ওয়েট, কোন গ্লাস বা ফুলদানি ছোট ছুরি — প্রতিরক্ষার জন্য নিজেকে বাঁচাতে আক্রমণ করতে হলেও পিছপা হয়ে যেও না। আমি বলেছিলাম, একে একে প্রত্যেকটি ঘটনার সব কিছু যেন খুলে সে তার মাকে বলে, যেন তারা অভিভাবক হিসেবে সবকিছু বুঝতে পারেন। যখন ঠিক ভাবে সবকিছু বুঝবেন, তখনই তো সাপোর্ট দিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ আমার বোনটার জন্য অনেক দোয়া যে সে শেষ পর্যন্ত সাহস করে বলতে পেরেছিল! শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল, আমি শিওর না। খুব সম্ভবত চাচাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়, অথবা সে কাছেই আরেকজন আত্মীয়ের বাসায় থাকে। প্রবাসে ফিরে যাওয়ার আগে সে ক্ষমা চেয়ে যায়।

এই সত্য ঘটনাটা এই বোনের অনুমতি নিয়ে শেয়ার করেছি কয়েকটা কারণে —

💎১। প্রিয় বোনেরা/ অভিভাবকরা,

ওয়ার্নিং সাইনগুলো আগে থেকেই খেয়াল করবেন। কোন মাহরাম পুরুষও যদি আপনাকে এমন ভাবে টাচ করে, যেটা আপনার অস্বস্তি লাগছে, সেগুলোর ব্যাপারে আগে থেকেই সচেতন হয়ে যাবেন। শুরু থেকেই বাউন্ডারি সেট করে দিবেন, "এ ধরনের টাচ আমার একদম পছন্দ না। আপনি যদি চান আপনাকে আত্মীয় হিসেবে আমি শ্রদ্ধা করি, তাহলে আমার থেকে দূরে থাকবেন।"

💎 ২। মা- বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কটা যেন এত সুন্দর, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসের হয়, যে এই ধরনের ক্রাইসিস হলে সন্তান মা-বাবার কাছে ছুটে যেতে সংকোচ বোধ না করে। মা বাবারা আপনাদের সন্তানের সাথে সেরকম একটা বন্ধন তৈরি করছেন তো? এমন যেন না হয় যে, আপনার সন্তান প্রতিদিন কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ আপনাকে বলতেও পারছে না।

💎 ৩। অবশ্যই পর্দার গুরুত্বের কোন শেষ নেই।

যদি এমন কোন মাহরাম আত্মীয় ঘরে এসে থাকা শুরু করে, যে কিনা ২০ বছর ধরে দেশের বাইরে ছিল এবং একদম যুবতী অবস্থায় তার ভাতিজাকে দেখছে, এই ক্ষেত্রগুলোতে পর্দার বিধান আসলে কেমন হবে ? সেটা একজন নির্ভরযোগ্য আলেমের সাথে পরামর্শ করে জেনে নেওয়া উচিত

💎 ৪। কোনরকম অন্যায় আপনার সাথে হয়ে গেলে, সেটার প্রতিবাদ করতে ভয় পাবেন না। যদিও নিঃসন্দেহে এটা অনেক ভয়, শঙ্কা এবং ট্রমার একটা পরিস্থিতি। ভরসা রাখুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করাটাই ঈমানের একটি লক্ষণ।

💎 ৫। এ ধরনের অ্যাবিউজ/ হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে মনন জগতে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত সারানোর ঔষধও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এবং ইসলামের মূলনীতি গুলোর মাধ্যমে। তাই, যদি দেখেন যে আপনি ভেঙে পড়ছেন, তাহলে‌ প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না।

💎 ৬। আপনি যদি কখনো নিজেকে এমন ভুক্তভোগী কারো সাপোর্ট পার্সন হওয়ার জায়গায় আবিষ্কার করেন, সব সময় সেই মানুষটাকে সাহস দিবেন। তাকে পজিটিভ কথা বলবেন। তাকে নেগেটিভ কথা বলে তাকে দোষারোপ করবেন না। তার সাথে বসে তার জন্য দুয়া করবেন। তাকে জড়িয়ে ধরবেন, তার মাথায় হাত রাখবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে যখন আওয়াজ তুলবে, সম্ভব হলে আপনিও তখন আপনার আওয়াজটা তার সাথে জোরালো করবেন ইন শা আল্লাহ।

💎 ৭। সচেতনতার জন্য শেয়ার করুন এই গল্পগুলো। কথা বলুন এই বিষয়গুলো নিয়ে। সবাই চুপ থাকলে কি কোন সমাধান হবে? হবে না কিন্তু।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হেফাজতে রাখুন, ভালো রাখুন। আমিন।

No comments: